শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গ পুনর্বাসন ভাতা শ্রমিকদের জন্য ভাতা, ঋণ ও কর্মসংস্থানের সুবিধা
শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন উদ্যোগ
প্রকাশের তারিখ: ১৯ আগস্ট ২০২৫
কার্যকর হওয়ার তারিখ: ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রকাশক বিভাগ: শ্রম দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
শ্রমশ্রী প্রকল্প কী?
শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মানবিক উদ্যোগ। এর মূল উদ্দেশ্য হল বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের (Migrant Workers) জন্য সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, দেশের অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করার সময় বাংলার শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে আসতে চাইছেন। কিন্তু হঠাৎ ফিরে এলে তাদের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার শ্রমশ্রী প্রকল্প চালু করেছে, যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা ফিরে এসে সহজে নতুন করে কাজ শুরু করতে পারেন এবং তাদের পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়।
কারা এই প্রকল্পে সুবিধা পাবেন?
- যারা West Bengal Migrant
Worker Welfare Scheme, 2023-এ নিবন্ধিত অভিবাসী শ্রমিক।
- যাদের আধার কার্ড/ভোটার আইডি (EPIC) পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানায় রয়েছে।
- অথবা যাদের বাবা-মায়ের নামে পশ্চিমবঙ্গের ঠিকানা সহ আধার/ভোটার আইডি আছে।
প্রকল্পের
সুবিধা
১. যাতায়াত সহায়তা
- প্রত্যেক যোগ্য শ্রমিককে একবারের জন্য ₹৫,০০০ ভাতা দেওয়া হবে, যাতে তারা সহজে পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে পারেন।
২. পুনর্বাসন ভাতা
- প্রতি মাসে ₹৫,০০০ করে এক বছর পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হবে।
- যতদিন না তারা নতুন কর্মসংস্থান পান, ততদিন এই সহায়তা চালু থাকবে।
- আবেদন করা যাবে karmasathips.wblabour.gov.in পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
৩. দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সহায়তা
- উৎকর্ষ বাংলা (Utkarsh Bangla) স্কিমের অধীনে প্রশিক্ষণ ও স্কিল ম্যাপিং।
- যাতে ফিরে আসা শ্রমিকরা নিজের এলাকায় কাজের সুযোগ পান।
৪. উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সহায়তা
- কর্মশ্রী (Karmashree) স্কিমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ ও জব কার্ড।
- উদীয়মান স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প (U.S.K.P / U.S.K.J.P)-এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ₹৫০,০০০ পর্যন্ত ঋণ, যেখানে ২৫% মার্জিন মানি (সর্বোচ্চ ₹১২,৫০০) সরকার দেবে।
- সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও অর্থ দপ্তর থেকে সর্বোচ্চ ₹৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টার্ম লোন।
- পশ্চিমবঙ্গ স্বনির্ভর সহায়ক প্রকল্প (WBSSP) এর মাধ্যমে SHG/গ্রুপ ভিত্তিক ঋণ।
- SC, ST ও OBC উন্নয়ন ও অর্থ কর্পোরেশন-এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি।
৫. শিক্ষার সুযোগ
- ফেরত আসা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য সরকারি স্কুলে ভর্তি ও বৃত্তি সুবিধা।
৬. সামাজিক সুরক্ষা
- স্বাস্থ্যবিমা, পেনশন সহ বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ।
কীভাবে
আবেদন করবেন?
- নিবন্ধিত অভিবাসী শ্রমিকরা karmasathips.wblabour.gov.in পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপে আবেদন করতে পারবেন।
- প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে:
- আধার কার্ড/ভোটার আইডি/বাড়ির দলিল
- পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজের প্রমাণপত্র (যদি থাকে)
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য
- আবেদন যাচাই হওয়ার পর সরাসরি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া
- শ্রম দপ্তর হবে এই প্রকল্পের মূল দপ্তর।
- প্রতিটি জেলায় জেলা শাসক, পঞ্চায়েত, শিল্প প্রতিনিধি ও ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হবে।
জরুরী কহেলোইন নম্বর: 1800-103-0009
How To Install Mobile App- View
❓ শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ কী?
উত্তর: শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি কল্যাণমূলক স্কিম, যেখানে অভিবাসী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে আসার পর যাতায়াত খরচ, মাসিক ভাতা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, ঋণ এবং কর্মসংস্থানের সুবিধা পাবেন।
২. এই প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবেন?
উত্তর: যেসব শ্রমিক West
Bengal Migrant Worker Welfare Scheme 2023-এ রেজিস্টার্ড এবং যাদের বা তাদের বাবা-মায়ের নামে পশ্চিমবঙ্গের আধার কার্ড বা ভোটার আইডি আছে, তারা এই প্রকল্পে সুবিধা পাবেন।
৩. শ্রমশ্রী প্রকল্পে কত টাকা ভাতা দেওয়া হবে?
উত্তর:
- যাতায়াতের জন্য একবারে ₹৫,০০০ দেওয়া হবে।
- পুনর্বাসনের জন্য প্রতি মাসে ₹৫,০০০ করে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হবে।
৪. শ্রমশ্রী প্রকল্পে কীভাবে আবেদন করতে হবে?
উত্তর: শ্রমিকরা অনলাইনে karmasathips.wblabour.gov.in পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। প্রমাণপত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথ্য জমা দিতে হবে।
৫. এই প্রকল্পে কি শুধু ভাতা দেওয়া হবে?
উত্তর: না, শুধু ভাতা নয়। শ্রমশ্রী প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, কর্মশ্রী স্কিমে কাজ, স্বনির্ভর প্রকল্পে ঋণ, সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিশেষ ঋণ এবং সন্তানদের শিক্ষা সুবিধাও দেওয়া হবে।
৬. শ্রমশ্রী প্রকল্পের টাকা কীভাবে দেওয়া হবে?
উত্তর: যাচাই সম্পূর্ণ হলে সরাসরি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।
৭. শ্রমশ্রী প্রকল্পে সর্বোচ্চ কত ঋণ পাওয়া যাবে?
উত্তর: সংখ্যালঘু উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে সর্বোচ্চ ₹৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টার্ম লোন, আর অন্য স্বনির্ভর প্রকল্পে সর্বোচ্চ ₹৫০,০০০ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে।
শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ কেবল একটি সরকারি ভাতা প্রকল্প নয়, বরং এটি পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য একটি পুনর্বাসন পরিকল্পনা। অন্য রাজ্যে বৈষম্যের শিকার হয়ে যারা ঘরে ফিরতে চাইছেন, তাদের জন্য এটি একটি সুরক্ষার আশ্বাস।
Post a Comment